কাছাড় ক্রনিকেলস, শিলচর, ২০ এপ্রিল
হিন্দুস্তান পেপার কর্পোরেশনের অধীনে থাকা কাছাড় কাগজ কল বন্ধ হয়েছিল ২০১৫ সালে এবং এবং নগাও কাগজ কল বন্ধ হয় ২০১৭ সালে। প্রায় ৬০ মাসের বেশি সময় ধরে বেতনহীন কর্মচারীরা, চিকিৎসার অভাবে এবং বিভিন্ন সমস্যায় আগেই মৃত্যুবরণ করেছেন ১০২, এর মধ্যে রয়েছে চারটি আত্মহত্যা। এবার একইভাবে প্রাণ গেল আরেক কর্মীর, এতে বেতনহীন মৃত্যুর সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ালো ১০৩-য়ে।
কাগজ কলের কর্মচারীদের সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী উড়িষ্যার কটক শহরের বাসিন্দা ৫৮-বছরের রাজেন্দ্র কুমার দালোই ১৮ এপ্রিল অর্থাৎ সোমবার রাত দশটায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে কিডনি জনিত সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি এবং টাকা পয়সার অভাবে পর্যাপ্ত চিকিৎসা করাতে পারেননি। শেষমেষ চিকিৎসার ওভাবেই তার মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সহকর্মীরা।
দুই কাগজ কল পুনরুদ্ধারের দাবিতে একটি জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি রয়েছে, তার পক্ষ থেকে মানবেন্দ্র চক্রবর্তী বলেন, "আগের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালের জমানায় ৮৫ জন সহকর্মীর মৃত্যু দেখেছি এবং গত নয় মাসে ১৮ জনের মৃত্যুতে এই সংখ্যা এখন দাঁড়ালো ১০৩-য়ে। এই ১০৩ একটা সংখ্যা হলেও আমরা জানি কতটুকু বেদনা এবং হতাশা এর পেছনে লুকিয়ে রয়েছে। যেখানে সরকার আত্মনির্ভর হও বলে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করছেন, দুটো সফল কাগজ কলকে শেষ করে দিয়ে তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা কর্মচারীদের ধীরে ধীরে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। আমরা এই প্রত্যেকটি মৃত্যুকে হত্যা হিসেবে গণ্য করি।"
হাইলাকান্দির পাঁচগ্রামে থাকা কাছাড় কাগজ কল এবং মরিগাও জিলার জাগীরোড থাকা নঁগাও কাগজ কলকে আগেই দেউলিয়া ঘোষণা করেছে ন্যাশনাল কোম্পানি লো ট্রাইবুনাল (এনসিএলটি)। পরপর নিলামের নোটিশ জারি করে সম্পত্তি বিক্রির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন লিকুইডেটর কুলদীপ ভার্মা। সম্প্রতি রাজ্য সরকার ৩৭৫ কোটি টাকায় ২ কাগজ কলের যাবতীয় সম্পত্তির অধিকার নিয়েছে। গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা কথা দিয়েছিলেন কাগজ কলের কর্মীদের জীবন রক্ষার্থে ৫৭০ কোটি টাকার রিলিফ প্যাকেজ দেওয়া হবে। দুই মাসের মধ্যে সেই প্যাকেজ দেওয়ার কথা ছিল কিন্তু ছয় মাস গড়িয়ে গেলেও কর্মীরা একই অবস্থায় রয়েছেন। অথচ এদিকে সম্পত্তি বিক্রি হয়েছে এবং আগামীতে কর্মীদের কোয়ার্টার ছাড়তে হবে।
কাগজকলের সম্পত্তি বিক্রির জন্য বহুবার চেষ্টা হলেও সেটা ব্যর্থ হয়। এর অন্যতম কারণ ছিল নিলাম প্রক্রিয়ায় রাজ্য সরকারের যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত। গতবছর ২৮ সেপ্টেম্বর টানা চার ঘন্টা কাগজকল কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। পুরনো সিদ্ধান্তকে সামনে রেখে শেষ কথা হয়, ৫৭০ কোটি টাকা অসম সরকারের পক্ষ থেকে কাগজ কল কর্মীদের বকেয়া মেটাতে দেওয়া হবে। সঙ্গে ১০০ জন স্থায়ী কর্মচারীকে অসম সরকারের বিভিন্ন বিভাগে চাকরি দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করা হয়।
সরকারের পক্ষ থেকে যে রিলিফ প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছিল, সেটা দেওয়ার কথা ছিল দুই মাসের মধ্যে, এখনো কর্মীরা কোনও টাকা পাননি। কাগজ কলের কর্মচারী, যারা বহুদিন ধরে এটি পুনরুদ্ধার নিয়ে আন্দোলন করে আসছেন, তাদের দাবি, শুধুমাত্র সম্পত্তি বিক্রির উদ্যোগ না নিয়ে সরকার যেন এই শিল্পকে পুনরায় চালু করার চেষ্টা করে। দুই কাগজ কলের জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটির পক্ষ থেকে মানবেন্দ্র চক্রবর্তী বলেন, 'এনসিএলটি বারবার সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন, তাদের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া যাতে কাগজ কল পুনরায় চালু করার দিকেই এগোয়, কোনভাবেই যাতে এক সময়ে সফল থাকা এই শিল্পগুলো বন্ধ হয়ে না যায়। আমরা বারবার বৈঠকে অংশ নিয়েছি এবং শুধুমাত্র প্রতিশ্রুতিই পেয়েছি। আমরা চাই আমাদের বকেয়া মিটিয়ে দেওয়া হোক, তবে সঙ্গে এটাও চাই কাগজ কল যাতে বন্ধ না হয়।'