বিয়ের মরসুমে বরযাত্রী যাওয়া, আনন্দ করা এগুলো স্বাভাবিক বিষয়। তবে বরযাত্রীতে অংশ নিয়ে এক যুবক যখন জানলেন এক থালাসেমিয়া রোগীর রক্তের প্রয়োজন, তৎক্ষণাৎ রাজি হয়ে গেলেন, রাত বারোটায় রক্ত দিয়ে প্রাণ বাঁচালেন এক শিশুর।
ঘটনাটি ঘটেছে করিমগঞ্জ জেলায়, সেখানে প্রশান্তি লজে এক বিয়ের অনুষ্ঠানে বরযাত্রী হিসেবে যোগ দিয়েছেন জীবিতেশ দাস নামের এক যুবক। যখন জানা গেল নিলামবাজারের থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত একটি শিশুর তৎক্ষণাৎ রক্তের প্রয়োজন এবং তাকে করিমগঞ্জ সিভিল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, বিয়ের আসরেই ঘোষণা করা হল কথাটি। সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে গেলেন জীবিতেশ দাস এবং রাত বারোটায় হাসপাতালে পৌঁছে রক্তদান করে শিশুটির প্রাণ বাঁচালেন।
সমাজসেবী মিঠুন রায় খবরটি জানিয়েছেন। তিনি জানান শনিবার রাত আটটা নাগাদ নিলামবাজার থেকে এক মহিলাকে ফোন করেন এবং জানান থেলাসেমিয়া আক্রান্ত রোগীর রক্তের প্রয়োজন।
তিনি বলেন, "রাত তখন প্রায় আটটা, নিলামবাজার থেকে এক বোন ফোন করে আমায় বলেন ওনার বোনঝি থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত । কিন্তু অর্থের অভাবে শিশুর পরিবার তাকে পর্যাপ্ত চিকিৎসা প্রদান করতে পারছে না। এছাড়া প্রতি মাসে এক ইউনিট রক্ত দেওয়ার কথা হলেও এক্সচেঞ্জ ডোনার না পাওয়ায় কয়েক মাস থেকে সেটাও বন্ধ। শনিবার সকাল থেকে শিশুটির স্বাস্থ্যের অবনতি হয়, মুখ দিয়ে লালা ঝরছে, শরীর ফ্যাকাশে হয়ে গেছে, উঠে বসতে পারছে না, শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। স্থানীয় চিকিৎসকরা বলেছেন, রক্ত ছাড়া উপায় নেই । সমস্ত দিন খোঁজে আপনার নাম্বার জোগাড় করেছি, আমাদের সন্তানকে বাঁচান ভাই। আমি ওই বোনকে বলি আপনি শীঘ্রই ওকে করিমগঞ্জ সিভিল হাসপাতালে নিয়ে যান, বাকি দেখছি।"
"বিষয়টি ফোন করে জানাই ত্রিশুল এনজিও-র কর্ণধার তথা সক্ষম করিমগঞ্জের কার্যকর্তা পার্থকে। তখন সে করিমগঞ্জ প্রশান্তি লজে এক বিয়ের অনুষ্ঠানে বরযাত্রী। এমন খবর শুনে উপায় খুঁজে না পেয়ে পার্থ বরযাত্রীদের মধ্যেই আবেদন রাখে একটি থ্যালাসেমিয়া শিশুর প্রাণ বাঁচাতে কি কেউ রক্ত দান করবেন? বরযাত্রীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জীবিতেশ দাস। তিনি স্বেচ্ছায় এগিয়ে এসে বলেন, এই কঠিন সময়ে যদি আমি কাজে আসতে পারি। ব্যস আর কি, বন্ধু বাসব চক্রবর্তী ও সাগর দে কে সঙ্গে নিয়ে রাত প্রায় বারোটায় ব্লাড ব্যাংকে গিয়ে রক্তদান প্রক্রিয়া সম্পন্ন করান পার্থ দাস। রক্ত পায় সেই শিশুটি, আরও দুই ইউনিট রক্ত এখনও প্রয়োজন। আমরা চেষ্টা করছি সেই ক্ষেত্রেও পরিবারকে সাহায্য করতে," মিঠুন জানান।
ঘটনায় অনেকেই উদ্বুদ্ধ হয়েছেন এবং যারা এই পুরো প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিলেন, সবাইকে সোশ্যাল মিডিয়ায় সাধুবাদ জানানো হচ্ছে। রক্তদান এমন একটি বিষয় যা এখন সমাজে অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে এবং যুবক প্রজন্ম এর থেকে পিছিয়ে থাকছে না। তবুও এখনো বহু রোগী সময়মতো রক্ত না পেয়ে প্রাণ হারাচ্ছেন। আজকাল অনেকেই নিজের জন্মদিনে বিবাহবার্ষিকীতে এমনকি মা-বাবার জন্মদিনে স্বেচ্ছায় রক্তদান করে উদযাপন করেন। এতে অজান্তেই দুঃস্থ ব্যক্তিদের সাহায্য করা হয়। এবার বরযাত্রিতে অংশ নিতে গিয়ে জীবিতেশ দাস রক্তদান করে নতুন উদাহরণ স্থাপন করেছেন।