শিলচর শহরের দাস কলোনি এলাকায় বুধবার সকালে কাটা গরুর মাথা রেখে দিল এক অজ্ঞাত পরিচয় দুষ্কৃতী। কয়েকদিন ধরেই এলাকায় কিছুটা উস্কানিমূলক মন্তব্য করে বেড়াচ্ছিলেন এক ব্যক্তি, প্রাথমিক সন্দেহে পুলিশ তাকে আটক করেছে। পুলিশের আধিকারিকরা জানিয়েছেন রাজন মজুমদার নামের ওই ব্যক্তিকে আটক করার পাশাপাশি তার দুই ছেলেকে আপাতত আটক করা হয়েছে। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেছেন, মন্দিরের পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে গোমাংসের চর্চা নিষিদ্ধ রয়েছে, কেউ যদি এর বিরোধীতা করে তাহলে প্রয়োজনে এলাকা ১০ কিলোমিটার করে দেওয়া হবে। বুধবার সকালে যেখানে ঘটনা হয়েছে, তার থেকে ১০০ মিটারের মধ্যে রয়েছে একটি পুরনো শনি মন্দির।
দাস কলোনি সারদা সরনির পাশে থাকা এরা আমাদের সংগঠনের বিদ্যালয়ের বিপরীতে সকাল আটটা নাগাদ কাটা গরুর মাথা দেখতে পান এলাকাবাসীরা। এতে অনেকেই কিছুটা অস্বস্তি বোধ করেন। কাটা গরুর মাথাকে নিয়ে কুকুর এবং কাকেরা টানাটানি করছিল। তবে আশ্চর্যজনকভাবে এলাকার দুই যুবক এই বিষয়ে ধর্মীয় মেরুকরণ টেনে হিন্দুদের বিরুদ্ধে মন্তব্য করতে শুরু করে। পাড়ার ছেলেরা বারবার তাদের শান্ত হতে বললেও তারা চিৎকার চেচামেচি করে এবং একসময় ঢিল ছুঁড়তে থাকে। এলাকাবাসীরা সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে খবর দেন এবং পুলিশ সহ সিআরপিএফ বাহিনী এলাকার উপস্থিত হয়। সরিয়ে নেওয়া হয় গরুর মাথার অংশটি এবং জায়গা জল দিয়ে ধুয়ে দেন এলাকাবাসীরা।
ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় বিবাদ সৃষ্টি করা এবং ধর্মীয় প্রসঙ্গ টেনে উস্কানিমূলক মন্তব্য করার দায়ে রাজেন মজুমদার (৫২) এবং তার দুই ছেলেকে আটক করেছে পুলিশ। এছাড়া এলাকায় সিআরপিএফ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। এলাকার লোকেরা জানিয়েছেন রাজেন মজুমদার বহুদিন ধরেই এধরনের কাজ করছিলেন। সম্প্রতি খোলা তলোয়ার নিয়ে এলাকায় ঘোরাঘুরি করছিলেন এবং হিন্দুদের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক মন্তব্য করছিলেন। এছাড়া এলাকার লোকেরা জানিয়েছেন তিন দিন আগে একই এলাকায় এভাবেই গরুর মাথার মাংস কেউ রেখে দিয়ে গেছিল। এলাকাবাসীরা খুব সাবধানে তখন পরিস্থিতি সামাল দিয়েছিলেন। তবে বুধবার সকালে পাড়ার দুই ছেলে রোহন মজুমদার এবং তার ভাই পারভেজ অযথা পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করে তুলে, বলে অভিযোগ তাদের।
ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে, তবে এলাকার মানুষ পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন এবং তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে পুলিশ। এলাকার বাসিন্দা নিশি দাশগুপ্ত বলেন, 'আমরা বহু বছর ধরে এলাকায় শান্তি বজায় রেখে চলেছি তবু কিছু লোক এধরনের কাজ করছে। আজ সকালে যেটা হয়েছে, সেটা অনেক বড় রূপ নিতে পারতো এবং কিছু ছেলেরা অযথা উস্কানিমূলক মন্তব্য করেছে। একসময় অনেক লোকেরা এলাকায় জমায়েত হতে শুরু করে কিন্তু আমরা পুলিশকে খবর দেওয়া তারা এসে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন। অতীতে এধরনের প্রচেষ্টা হয়েছে কিন্তু আমরা খুব সাবধানে সেটা সামাল দিয়েছি। তবে একটা শ্রেণি যদি বারবার উস্কানিমূলক চেষ্টা করে তাহলে কতদিন আটকানো যাবে? আমরা এলাকায় থাকা বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী লোকেদের কাছে আবেদন করছি আপনারাও এলাকায় শান্তি বজায় রাখতে সচেষ্ট হোন।'
তিনি পুলিশের আধিকারিকদের সাধুবাদ জানান এবং বলেন, 'এলাকাবাসীরা খবর দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যেভাবে তারা এসে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন এতে আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।'
এলাকার বাসিন্দা কাজল রায় বলেন, 'এই ঘটনা নতুন নয় অতীতে এমন বহু প্রচেষ্টা হয়েছে। প্রায় ১৫ বছর ধরে একটি অসাধু চক্র লাগাতার এধরনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, সমাজে অশান্তি দেখা দেয়। আজও তারা ধরনের একটা চেষ্টা চালিয়েছে, এর পেছনে উদ্দেশ্য হচ্ছে পরিস্থিতি খারাপ করা। গরুর মাথা রেখে দিয়ে তারপর উস্কানিমূলক মন্তব্য করেছে কিছু লোক। আমরা সবাই মিলে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছি এবং আগামীতে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে এধরনের ঘটনা পুরোপুরি আটকে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। প্রশাসনের কাছে আমাদের অনুরোধ আপনারা এই বিষয়টি গুরুত্ব নিয়ে সামাল দিন।'
রাঙ্গিরখাড়ি থানার ইনচার্জ কে. নাথ তার অন্যান্য আধিকারিকদের নিয়ে এলাকায় আসেন এবং তারা এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এলাকায় রয়েছেন। নাথ বলেন, "পরিস্থিতি সামাল দিতে আমরা এলাকায় এসেছি এবং এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে একটি সমাধান সূত্র বের করার চেষ্টা চলছে। এধরনের পরিস্থিতিতে আমরা অতীতে দেখেছি অনেক পরেও অশান্তি বাঁধার সম্ভাবনা থেকে যায়। তাই আমাদের বাহিনী আপাতত এখানে থাকবে এবং এলাকাবাসীর সঙ্গে আমরা কথা বলছি।"
এলাকার দুই সম্প্রদায়ের লোকেরা বৈঠক আয়োজন করেছেন এবং বিষয়টি যাতে পুনরাবৃত্তি না হয় এব্যাপারে একটি সমাধান সূত্র বের করার চেষ্টা চলছে।